সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০২৪
ঢাকা সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১
The Daily Post

সাড়ে তিন বছরেও শেষ হয়নি কাঁকড়া খালে সেতু নির্মাণ 

সখীপুর (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধি

সাড়ে তিন বছরেও শেষ হয়নি কাঁকড়া খালে সেতু নির্মাণ 

টাঙ্গাইলে সখীপুর উপজেলার কালিদাস-বহুরিয়া চতলবাইদ সড়কে কাঁকড়া খালে সেতু নির্মাণের কাজ সাড়ে তিন বছরেও শেষ হয়নি। এতে করে সড়কে চলাচলকারীদের চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। অপরদিকে কয়েক মাসের মধ্যেই সেতু নির্মাণের কাজ শেষ করা হবে বলে জানান ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান।

স্থানীয় লোকজন ও উপজেলা এলজিইডির কার্যালয় সূত্র জানায়, উপজেলার কালিদাস-বহুরিয়া চতলবাইদ সড়কের করটিয়াপাড়া এলাকায় কাঁকড়ার খালে গত ১০ বছর ধরে একটি সেতু নির্মাণের দাবি জানিয়ে আসছিল স্থানীয়রা।

সে দাবির প্রেক্ষিতে সরকারের শক্তিশালীকরণ প্রকল্প ও উপজেলার সঙ্গে ইউনিয়নের সড়ক প্রশস্তকরণ প্রকল্পের আওতায় সেতুর নির্মাণ কাজ ২০২১ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি শুরু হয়, যা ২ কোটি ২৮ লাখ ৭০ হাজার ৭৩১ টাকা ব্যয়ে ২৫ মিটার দৈর্ঘ্যের পিএসসি গার্ডার সেতুটির কাজ পায় মেসার্স মাইন উদ্দিন নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।

কার্যাদেশ অনুযায়ী কাজটি ২০২২ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মাত্র কয়েক মাস কাজ করে অজ্ঞাত কারণে ফেলে রেখে উধাও হয়ে যায়। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) দাবি ওই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান প্রথম দফায় ২০ ভাগ কাজ শেষ করেছিল। এরপর দুই বছর ধরে তাদের কোনো খোঁজ ছিল না। কয়েক মাস আগে ওই ঠিকাদার কিছু শ্রমিক নিয়ে গিয়ে দুই সপ্তাহ কাজ করে আবার উধাও হয়ে যায়। আবার দ্বিতীয় দফায় তাগিদ দেয়ার পর এখন ৫০ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে।

শুক্রবার (২০ সেপ্টেম্বর) সকালে সরেজমিনে দেখা যায়, নির্মাণাধীন পিএসসি গার্ডার সেতুটির দুই পাশের পিলারগুলো শুধু দাঁড় করানো হয়েছে। নির্মাণাধীন সেতুর পাশ দিয়ে সাময়িকভাবে হেঁটে ও মোটরসাইকেল চলাচলের জন্য স্থানীয়দের উদ্যোগে বাঁশের সাঁকো তৈরি করা হয়েছিল, যা বর্তমানে ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। সেতু নির্মাণের সময় মানুষ ও যান চলাচলের জন্য সাময়িকভাবে পাশে রাস্তা করার কথা থাকলেও তা করা হয়নি, যার ফলে জনদুর্ভোগ চরম আকার ধারণ করেছে।

করটিয়াপাড়া এলাকার বাসিন্দা জুলহাস উদ্দিন বলেন, দীর্ঘদিন ধরে ঠিকাদার চলে যাওয়ায় যাতায়াত করতে এলাকাবাসী চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। এলাকার উৎপাদিত কাঁচামাল উপজেলা থেকে জেলা শহরে আনা-নেয়া করা কষ্টকর হয়ে পড়ছে। প্রয়োজনের তাগিদে ১০-১৫ কিলোমিটার ঘুরে অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে যাতায়াত করতে বাধ্য হচ্ছে এলাকাবাসী।

বহুরিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সরকার নূরে আলম মুক্তা বলেন, সেতুটির অভাবে রাস্তায় আসা-যাওয়া করতে দুর্ভোগ পোহাতে হয়। তিনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে দ্রুত ব্রিজটি নির্মাণের দাবি জানান।

হাতিয়া ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ মো. রহিজ উদ্দিন  বলেন, সখীপুর উপজেলা শহর থেকে চতলবাইদ পর্যন্ত ৯ কিলোমিটার দুই লেনের নতুন সড়কটি চকচকে ঝকঝকে। অথচ সাড়ে তিন বছরেও সেতুটি নির্মাণ না হওয়ায় আমরা চরম কষ্টে আছি। ঠিকাদারের গাফিলতির কারণে সেতুটি সময়মতো নির্মাণ না হওয়ায় ওই সড়ক দিয়ে বাস, ট্রাকসহ কোনো যানবাহনই চলাচল করতে পারছে না। এতে মানুষ প্রতিদিন সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাচ্ছে।

মেসার্স মাইন উদ্দিন নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের পক্ষে মোহাম্মদ লিটন মিয়া বলেন, ব্যবসায়ীক নানা অসুবিধার কারণে কাজটি শুরু করেও শেষ করতে পারিনি এজন্য স্থানীয়দের কাছে দুঃখ প্রকাশ করছি। আশা করছি আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই সেতু নির্মাণের কাজ শেষ হবে।

এলজিইডির উপজেলা প্রকৌশলী মোহাম্মদ তোফাজ্জল হোসেন বলেন, গত দুই বছরে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কয়েকটি তাগিদপত্র দেয়া হয়েছে। কাজটি বাতিলের সিদ্ধান্তও হয়েছিল। কিন্তু ওই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান গত জানুয়ারির আগেই কাজটি শেষ করে দেবেন বলে আমাদের প্রতিশ্রুতিও দিয়েছিল, কিন্তু তারা প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে পারেনি। 

অনেক তাগিদ দেয়ার পর কিছু কাজ করেছে। গত দুই সপ্তাহ ধরে তাদের আবার দেখা যাচ্ছে না। তারা যাতে দ্রুত সেতুটি নির্মাণ কাজ শেষ করে এজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

টিএইচ